১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির অজানা অধ্যায় – ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আজিজ, পিএসসি (অব.)

১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির অজানা অধ্যায় – ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আজিজ, পিএসসি (অব.)

 ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিঃসন্দেহে ইতিহাসের একটি কলঙ্কতম দিন। ওই বিশেষ দিনে কেউ জানে কেউ জানে না যে তিনজন সৎ এবং সাহসী ব্যক্তি, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার মশহুরুল হক, নেভির এডিসি লে. রব্বানী এবং তৎকালীন আর্মির এডিসি ক্যাপ্টেন শরীফ আজিজ যারা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত স্টাফ ছিলেন তারা কী ভূমিকা রেখেছিলেন। তারা সবাই মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি আক্রমণের খবর শুনে তড়িৎগতিতে তার বাড়ির উদ্দেশে বের হয়ে গিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, এদের মধ্যে দুজন পরলোকগমন করেছেন। জীবিত আছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আজিজ অবসরপ্রাপ্ত। 
১৫ আগস্ট প্রত্যুষে প্রায় ৬টার দিকে গণভবনের ফখরুল ইসলাম নামে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছ থেকে আমি ক্যাপ্টেন শরীফ আজিজ রাষ্ট্রপতির আর্মি এডিসি বঙ্গভবনে অবস্থানকালে একটি ফোন পাই। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি জানেন কী ঘটছে?’ আমি অজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি বলেন, গণভবনের সামনে দিয়ে, ‘মিরপুর ও ধানমন্ডি রোডের দিকে ট্যাংকবহর এগোচ্ছে। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। দয়া করে একটু খবর নিন।’ এরপর আমি রাষ্ট্রপতির অন্য এক সিকিউরিটি অফিসার মহসিনকে ফোন করি। তিনিও জানালেন, ‘বন্দুকযুদ্ধ, ট্যাংক চলা এবং রাইফেলের গোলাগুলির ভীষণ শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।’ ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। এসব শোনার পর বিচলিত হয়ে আমি রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার মাশহুরুল হককে ফোন করি। তিনি আমাদের সঙ্গে বঙ্গভবনেই থাকতেন। আমি যা শুনেছি তা তাকে জানাই এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে সেখানে কী ঘটছে তা সচক্ষে দেখা আমাদের উচিত বলে জানালে তিনি তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে যান। পরে নৌবাহিনীর অন্য এডিসি লেফটেন্যান্ট গোলাম রব্বানী, যিনি আমার পাশের কক্ষেই থাকতেন, তাকেও ব্যাপারটা বলি। তিনিও বঙ্গবন্ধুুর বাসভবনে যাওয়ার ব্যাপারে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে আমরা বেশ কয়েকবার বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ফোন করে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হই।somoy66

আসলে অত সকালে পরিবহন ছাউনি থেকে কিছুটা বিলম্বিত হলেও একটি ভক্সওয়াগন গাড়ি সংগ্রহ করে বঙ্গবন্ধুর আবাসস্থল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের উদ্দেশে আমরা রওনা দিই। আমরা একটা ভিন্ন পথ অনুসরণ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পৌঁছে যাই। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে যাই। যেখানে কয়েক ঘণ্টা পরই একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আসার কথা ছিল। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সেখানে সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি না তা সচক্ষে দেখে যাওয়া।

আমরা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে এগোতে থাকি, কিন্তু কিছু দূর যেতে না যেতেই ধানমন্ডির বর্তমান ২ নম্বর রোডের মাথায় কালো পোশাক পরিহিত কতকগুলো লোকের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হই। আমরা বেসামরিক পোশাকে থাকায় সেনাবাহিনীর কিছু জওয়ান আমাদের গাড়ি আটকিয়ে আমাদের পরিচয় ও গন্তব্যস্থল জানতে চায়। জওয়ানরা আমাদের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যেতে নিষেধ করে, তবে আমরা নিজেদের রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত স্টাফ বলে পরিচয় দিলে তারা আমাদের যেতে দেয়। এরপর আমরা কলাবাগান স্টাফ কোয়ার্টার বরাবর পৌঁছামাত্রই কিছু উচ্ছৃঙ্খল সৈনিক আমাদের প্রতিরোধ করে। আমাদের গাড়ি থামিয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে নিষেধ করে এবং তারা যে ইতিমধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাও জানায়। তারা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।

বাংলার আকাশে নেমেছে আধার কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো
বাংলার আকাশে নেমেছে আধার কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো

এরপর সামান্য কিছু দূর যেতে না যেতেই কলাবাগান এলাকায় কালো পোশাক পরিহিত আরও কিছু সৈনিক আমাদের আবার থামিয়ে দেয়। এ সময় তারা আরও বেশি উগ্র ও আক্রমণাত্মক ছিল। তারা আমাদের গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ফেলে। আমরা আমাদের পরিচয় দিলে তারা আমাদের বিশ্বাসঘাতক, গাদ্দার বলে অভিহিত করে। আমাদের তক্ষুনি হত্যা করা উচিত বলে জানায়। এরপর শুরু হয় আমাদের ওপর লাঞ্ছনা ও অবমাননা, যা আমরা নীরবে সহ্য করতে থাকি। এর মধ্যে আমরা একটু খাবার পানি চাইলে তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠে, এদের পেশাব খাওয়াও। তারা আমাদের তিনজনকে এমন একটি দল হিসেবে চিহ্নিত করে যারা নাকি বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুকে যে হত্যা করা হয়েছে তার কিছুই যে আমরা এখনো জানি না বা শুনেও বিশ্বাস করিনি তা জেনে তারা দারুণভাবে বিস্মিত হয়। অবশ্য আমরা তাদের সঙ্গে থাকা রেডিওর এক ঘোষণায় তখনই প্রথম শুনলাম, ‘আমি মেজর ডালিম বলছি, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে’ ইত্যাদি। আমরা ওই ঘোষণা বিশ্বাস করতে পারিনি এবং সৈনিকদের কাছে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টার যৌক্তিকতা তুলে ধরায় তারা অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়। pita o konyaআমাদের গন্তব্যস্থল যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অতি নিকটে এবং সেখানে পৌঁছার জন্য যখন ব্যারিকেডটি উঠিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ এবং পীড়াপীড়ি করছিলাম তখন ওই সেনারা বিরক্ত ও চরম উত্তেজিত হয়ে ওঠে। যখন তারা জানতে পারে যে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পৌঁছার জন্য এটা ছিল আমাদের তৃতীয় প্রচেষ্টা তখন তারা আমাদের চোখ বেঁধে ফেলে এবং কোমরে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে মাটিতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা শুইয়ে রাখে। ইতিমধ্যে কর্নেল ফারুক রহমান, মেজর নূর চৌধুরী ও আরও কিছু সেনা অফিসার এদিক দিয়ে কয়েকবার যাতায়াত করেন এবং তাদের আমাদের অবস্থান ও বঙ্গবন্ধুর বাসায় পৌঁছানোর একাধিক প্রচেষ্টার কথা জানানো হয়। সব কিছুতেই অসত্য কথন দিয়ে তাদের বোঝানো হচ্ছিল যে আমরা তাদের প্রতিপক্ষ। আমার কাছে গুলিভর্তি রিভলবার থাকায় তারা আমাকে এই দলের মূল হোতা বলে গণ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। রিভলবারটি অবশ্য রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের ছিল এবং তা বঙ্গভবন থেকে আসার সময় আমার হাতে রাখতে বলা হয়েছিল। যাই হোক, এর মধ্যে তারা আমাদের হত্যা করে পাশের লেকের পানিতে ফেলে দেওয়ার জন্য একাধিক উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অলৌকিক কারণে সেদিন আমাদের জীবন রক্ষা পায়। এ ঘটনার বিবরণ অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসের লিখিত ‘Bangladesh : A Legacy of Blood’ নামক বইয়ের ৭৭ পৃষ্ঠার তৃতীয় অনুচ্ছেদে এবং বাংলা অনুবাদ ‘বাংলাদেশ রক্তের ঋণ’ বইয়ের ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের এক ভগি্নপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর শহীদউল্লাহ ওই দিন আমাদের এ করুণ অবস্থা স্বচক্ষে দেখেছিলেন। আমাদের চোখ বাঁধা থাকায় একমাত্র আল্লাহই জানতেন তখন কী ঘটেছিল। এমন চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাদের একটা জিপে করে দুপুর ১টার দিকে গণভবনে পাঠানো হয় এবং সেখানে একটি কক্ষে বন্দী করে রাখা হয়। দিনটি ছিল শুক্রবার এবং সে কারণে গণভবনের মসজিদে নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে প্রহরারত সৈনিকদের আমরা অনুরোধ করি। তারা আমাদের নামাজ পড়ার সুযোগ দেয় এরপর সন্ধ্যার দিকে গণভবনের Comptrollerযিনি আমাদের পূর্বপরিচিত ছিলেন একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। প্রহরারত ক্লান্ত গার্ডদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমরা ওই গাড়িতে রাতের অন্ধকারে বঙ্গভবনে ফিরে আসি। বঙ্গভবনে এসে দেখি আমাদের পদে নতুন অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এসব অফিসার এডিসি ও রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের দায়িত্ব বুঝেও নিয়েছেন। নবগঠিত সরকারের লোকজন তখন আমাদের প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা নতুন পোস্টিং অর্ডার পাই এবং আমরা যখন নতুন পদে যোগদানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ঠিক তখনই অভ্যুত্থানকারীদের তরফ থেকে জানানো হয় যে, আমাদের নতুন পদায়ন পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। শপথ গ্রহণ, অভিষেক ও ক্রেডেনশিয়াল উপস্থাপনার মতো বঙ্গভবনের বিশেষ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ ধরনের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়, যা কি না নতুন এসব অফিসারের ছিল না। এসব অনুষ্ঠানাদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা শুধু আমাদের দ্বারাই সম্ভব ছিল বিধায় তারা আমাদের পোস্টিং অর্ডার স্থগিত করে। তবে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জনাব আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করলে আমরা আমাদের স্বাভাবিক দায়িত্ব পুনঃগ্রহণ করতে পারলেও এর আগের আড়াই মাস বঙ্গভবনের কোনো অনুষ্ঠান বা সভাস্থলে আমাদের আগের মতো অবাধ প্রবেশ ও উপস্থিতি একেবারে নিষিদ্ধ ছিল। এ বর্ণনা থেকে একটা সত্য বেরিয়ে আসে যে, ওই কালো দিনটিতে কর্নেল জামিল ছাড়াও আমরা রাষ্ট্রপতির আরও তিনজন ব্যক্তিগত স্টাফ সকল প্রকার ভয়ভীতি ও দ্বিধার ঊর্ধ্বে থেকে কর্তব্যের ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। আমরা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছানোর জন্য বার বার চেষ্টা করেও অসম শক্তির মহড়ায় ব্যর্থ হই। শুধু ভাগ্যের লিখন ও অলৌকিক কারণে ওই দিন আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম।

আমাদের মধ্যে তিনজন বঙ্গভবন থেকে এবং কর্নেল জামিল গণভবন থেকে আসতে ছিলেন। যদি আমরা খুব ভোরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পৌঁছাতে পারতাম তাহলেও আমরা বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারতাম না কারণ, আমরা অস্ত্রহীন ছিলাম। উল্লেখ্য যে, ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নামে কোনো অস্ত্র বরাদ্দ থাকে না। ৩২ নম্বর বাড়িতে আক্রমণের সংবাদ শোনামাত্র কর্তব্যে সাড়া দেওয়াই ছিল তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা হোক, একটা ব্যাপার নিশ্চিত ছিল যে বঙ্গবন্ধু, যদি আমাদের পরামর্শ মোতাবেক প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বঙ্গভবন বা গণভবনে থাকতেন, তাহলে সামরিক অভ্যুত্থান কৃতকার্য হওয়া কষ্টসাধ্য হতো। ৩২ নম্বর বাড়ির প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যথেষ্ট ঢিলেঢালা ছিল। বছরের পর বছর (১৯৭২-১৯৭৫) এদিকে নজর না দেওয়া অবশ্যই আমাদের ব্যর্থতা ছিল। সুতরাং এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের চিফ সিকিউরিটি অফিসার এবং ব্যক্তিগত স্টাফদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা; প্রহরী নিয়োগ, গোয়েন্দা কার্যক্রম ইত্যাদি ব্যাপারে অদূরদর্শিতার জন্য তাদের দায়ী করা যায়। যদিও তখন প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার পরও আমার যতদূর মনে পড়ে তাদের ৩২ নম্বর রোডে নিয়োজিত করা হয়নি। বাড়িটি তখনো সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত ২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির প্রহরাধীন ছিল। বিচিত্র! অবাক হওয়ার মতো একটি বিষয়। আর আমরা কিছুই অাঁচ করতে পারলাম না। 21shomoy

যেহেতু সেনাবাহিনী এই সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত ছিল না সেহেতু পুরো সেনাবাহিনী ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েছিল। বরং সেনাবাহিনীকে কোনোভাবেই এই সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী করা যাবে না। কিন্তু সেনাবাহিনীর সিনিয়র কমান্ড কর্তৃক ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটার পর ঘটনাস্থলে যাওয়া সবাই আকাঙ্ক্ষিত ছিল। ঘটনার পর, স্থানীয় সেনা অধিনায়ক ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং সেনাবাহিনী পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছিল। যে কোনো বিবেচনায়ই এটা ছিল একটি চরম ব্যর্থতা। যা হোক, নেহাত কর্তৃত্বের তাগিদেই আমরা তিনজন সেদিন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে ছুটে গিয়েছিলাম। নানা রকমের বিশেষণ যেমন- অতি সাহসিকতা, দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ উদাহরণ সৃষ্টি, সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ বা চরম উৎসর্গ ইত্যাদির সংশ্লিষ্টতা তখন ছিল না এবং আমাদের খ্যাতি হিসেবে এখনো এগুলোকে গণ্য করা যাবে না।

আমি তখন ২৫ বছরের সীমিত জ্ঞানের একজন জুনিয়র অফিসার ছিলাম। সুতরাং এখন ৪০ বছর পর আপনাদের অনেকের প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে সক্ষম হব না। সুত্রঃ

বাংলাদেশ প্রতিদিনঢাকা, শনিবার, ১৫ আগস্ট ২০১৫


One thought on “১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির অজানা অধ্যায় – ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আজিজ, পিএসসি (অব.)

  1. ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির অজানা অধ্যায় – ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আজিজ, পিএসসি (অব.)

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিঃসন্দেহে ইতিহাসের একটি কলঙ্কতম দিন। ওই বিশেষ দিনে কেউ জানে কেউ জানে না যে তিনজন সৎ এবং সাহসী ব্যক্তি, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার মশহুরুল হক, নেভির এডিসি লে. রব্বানী এবং তৎকালীন আর্মির এডিসি ক্যাপ্টেন শরীফ আজিজ যারা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত স্টাফ ছিলেন তারা কী ভূমিকা রেখেছিলেন। তারা সবাই মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি আক্রমণের খবর শুনে তড়িৎগতিতে তার বাড়ির উদ্দেশে বের হয়ে গিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, এদের মধ্যে দুজন পরলোকগমন করেছেন। জীবিত আছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আজিজ অবসরপ্রাপ্ত।
    ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে প্রায় ৬টার দিকে গণভবনের ফখরুল ইসলাম নামে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছ থেকে আমি ক্যাপ্টেন শরীফ আজিজ রাষ্ট্রপতির আর্মি এডিসি বঙ্গভবনে অবস্থানকালে একটি ফোন পাই। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি জানেন কী ঘটছে?’ আমি অজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি বলেন, গণভবনের সামনে দিয়ে, ‘মিরপুর ও ধানমন্ডি রোডের দিকে ট্যাংকবহর এগোচ্ছে। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। দয়া করে একটু খবর নিন।’ এরপর আমি রাষ্ট্রপতির অন্য এক সিকিউরিটি অফিসার মহসিনকে ফোন করি। তিনিও জানালেন, ‘বন্দুকযুদ্ধ, ট্যাংক চলা এবং রাইফেলের গোলাগুলির ভীষণ শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।’ ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। এসব শোনার পর বিচলিত হয়ে আমি রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার মাশহুরুল হককে ফোন করি। তিনি আমাদের সঙ্গে বঙ্গভবনেই থাকতেন। আমি যা শুনেছি তা তাকে জানাই এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে সেখানে কী ঘটছে তা সচক্ষে দেখা আমাদের উচিত বলে জানালে তিনি তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে যান। পরে নৌবাহিনীর অন্য এডিসি লেফটেন্যান্ট গোলাম রব্বানী, যিনি আমার পাশের কক্ষেই থাকতেন, তাকেও ব্যাপারটা বলি। তিনিও বঙ্গবন্ধুুর বাসভবনে যাওয়ার ব্যাপারে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে আমরা বেশ কয়েকবার বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ফোন করে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হই।somoy66
    আসলে অত সকালে পরিবহন ছাউনি থেকে কিছুটা বিলম্বিত হলেও একটি ভক্সওয়াগন গাড়ি সংগ্রহ করে বঙ্গবন্ধুর আবাসস্থল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের উদ্দেশে আমরা রওনা দিই। আমরা একটা ভিন্ন পথ অনুসরণ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পৌঁছে যাই। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে যাই। যেখানে কয়েক ঘণ্টা পরই একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আসার কথা ছিল। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সেখানে সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি না তা সচক্ষে দেখে যাওয়া।

    আমরা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে এগোতে থাকি, কিন্তু কিছু দূর যেতে না যেতেই ধানমন্ডির বর্তমান ২ নম্বর রোডের মাথায় কালো পোশাক পরিহিত কতকগুলো লোকের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হই। আমরা বেসামরিক পোশাকে থাকায় সেনাবাহিনীর কিছু জওয়ান আমাদের গাড়ি আটকিয়ে আমাদের পরিচয় ও গন্তব্যস্থল জানতে চায়। জওয়ানরা আমাদের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যেতে নিষেধ করে, তবে আমরা নিজেদের রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত স্টাফ বলে পরিচয় দিলে তারা আমাদের যেতে দেয়। এরপর আমরা কলাবাগান স্টাফ কোয়ার্টার বরাবর পৌঁছামাত্রই কিছু উচ্ছৃঙ্খল সৈনিক আমাদের প্রতিরোধ করে। আমাদের গাড়ি থামিয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে নিষেধ করে এবং তারা যে ইতিমধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাও জানায়। তারা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।

    বাংলার আকাশে নেমেছে আধার কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো
    বাংলার আকাশে নেমেছে আধার কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো
    এরপর সামান্য কিছু দূর যেতে না যেতেই কলাবাগান এলাকায় কালো পোশাক পরিহিত আরও কিছু সৈনিক আমাদের আবার থামিয়ে দেয়। এ সময় তারা আরও বেশি উগ্র ও আক্রমণাত্মক ছিল। তারা আমাদের গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ফেলে। আমরা আমাদের পরিচয় দিলে তারা আমাদের বিশ্বাসঘাতক, গাদ্দার বলে অভিহিত করে। আমাদের তক্ষুনি হত্যা করা উচিত বলে জানায়। এরপর শুরু হয় আমাদের ওপর লাঞ্ছনা ও অবমাননা, যা আমরা নীরবে সহ্য করতে থাকি। এর মধ্যে আমরা একটু খাবার পানি চাইলে তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠে, এদের পেশাব খাওয়াও। তারা আমাদের তিনজনকে এমন একটি দল হিসেবে চিহ্নিত করে যারা নাকি বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুকে যে হত্যা করা হয়েছে তার কিছুই যে আমরা এখনো জানি না বা শুনেও বিশ্বাস করিনি তা জেনে তারা দারুণভাবে বিস্মিত হয়। অবশ্য আমরা তাদের সঙ্গে থাকা রেডিওর এক ঘোষণায় তখনই প্রথম শুনলাম, ‘আমি মেজর ডালিম বলছি, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে’ ইত্যাদি। আমরা ওই ঘোষণা বিশ্বাস করতে পারিনি এবং সৈনিকদের কাছে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টার যৌক্তিকতা তুলে ধরায় তারা অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়। pita o konyaআমাদের গন্তব্যস্থল যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অতি নিকটে এবং সেখানে পৌঁছার জন্য যখন ব্যারিকেডটি উঠিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ এবং পীড়াপীড়ি করছিলাম তখন ওই সেনারা বিরক্ত ও চরম উত্তেজিত হয়ে ওঠে। যখন তারা জানতে পারে যে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পৌঁছার জন্য এটা ছিল আমাদের তৃতীয় প্রচেষ্টা তখন তারা আমাদের চোখ বেঁধে ফেলে এবং কোমরে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে মাটিতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা শুইয়ে রাখে। ইতিমধ্যে কর্নেল ফারুক রহমান, মেজর নূর চৌধুরী ও আরও কিছু সেনা অফিসার এদিক দিয়ে কয়েকবার যাতায়াত করেন এবং তাদের আমাদের অবস্থান ও বঙ্গবন্ধুর বাসায় পৌঁছানোর একাধিক প্রচেষ্টার কথা জানানো হয়। সব কিছুতেই অসত্য কথন দিয়ে তাদের বোঝানো হচ্ছিল যে আমরা তাদের প্রতিপক্ষ। আমার কাছে গুলিভর্তি রিভলবার থাকায় তারা আমাকে এই দলের মূল হোতা বলে গণ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। রিভলবারটি অবশ্য রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের ছিল এবং তা বঙ্গভবন থেকে আসার সময় আমার হাতে রাখতে বলা হয়েছিল। যাই হোক, এর মধ্যে তারা আমাদের হত্যা করে পাশের লেকের পানিতে ফেলে দেওয়ার জন্য একাধিক উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অলৌকিক কারণে সেদিন আমাদের জীবন রক্ষা পায়। এ ঘটনার বিবরণ অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসের লিখিত ‘Bangladesh : A Legacy of Blood’ নামক বইয়ের ৭৭ পৃষ্ঠার তৃতীয় অনুচ্ছেদে এবং বাংলা অনুবাদ ‘বাংলাদেশ রক্তের ঋণ’ বইয়ের ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের এক ভগি্নপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর শহীদউল্লাহ ওই দিন আমাদের এ করুণ অবস্থা স্বচক্ষে দেখেছিলেন। আমাদের চোখ বাঁধা থাকায় একমাত্র আল্লাহই জানতেন তখন কী ঘটেছিল। এমন চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাদের একটা জিপে করে দুপুর ১টার দিকে গণভবনে পাঠানো হয় এবং সেখানে একটি কক্ষে বন্দী করে রাখা হয়। দিনটি ছিল শুক্রবার এবং সে কারণে গণভবনের মসজিদে নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে প্রহরারত সৈনিকদের আমরা অনুরোধ করি। তারা আমাদের নামাজ পড়ার সুযোগ দেয় এরপর সন্ধ্যার দিকে গণভবনের Comptrollerযিনি আমাদের পূর্বপরিচিত ছিলেন একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। প্রহরারত ক্লান্ত গার্ডদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমরা ওই গাড়িতে রাতের অন্ধকারে বঙ্গভবনে ফিরে আসি। বঙ্গভবনে এসে দেখি আমাদের পদে নতুন অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এসব অফিসার এডিসি ও রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের দায়িত্ব বুঝেও নিয়েছেন। নবগঠিত সরকারের লোকজন তখন আমাদের প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা নতুন পোস্টিং অর্ডার পাই এবং আমরা যখন নতুন পদে যোগদানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ঠিক তখনই অভ্যুত্থানকারীদের তরফ থেকে জানানো হয় যে, আমাদের নতুন পদায়ন পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। শপথ গ্রহণ, অভিষেক ও ক্রেডেনশিয়াল উপস্থাপনার মতো বঙ্গভবনের বিশেষ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ ধরনের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়, যা কি না নতুন এসব অফিসারের ছিল না। এসব অনুষ্ঠানাদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা শুধু আমাদের দ্বারাই সম্ভব ছিল বিধায় তারা আমাদের পোস্টিং অর্ডার স্থগিত করে। তবে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জনাব আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করলে আমরা আমাদের স্বাভাবিক দায়িত্ব পুনঃগ্রহণ করতে পারলেও এর আগের আড়াই মাস বঙ্গভবনের কোনো অনুষ্ঠান বা সভাস্থলে আমাদের আগের মতো অবাধ প্রবেশ ও উপস্থিতি একেবারে নিষিদ্ধ ছিল। এ বর্ণনা থেকে একটা সত্য বেরিয়ে আসে যে, ওই কালো দিনটিতে কর্নেল জামিল ছাড়াও আমরা রাষ্ট্রপতির আরও তিনজন ব্যক্তিগত স্টাফ সকল প্রকার ভয়ভীতি ও দ্বিধার ঊর্ধ্বে থেকে কর্তব্যের ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। আমরা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছানোর জন্য বার বার চেষ্টা করেও অসম শক্তির মহড়ায় ব্যর্থ হই। শুধু ভাগ্যের লিখন ও অলৌকিক কারণে ওই দিন আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম।

    আমাদের মধ্যে তিনজন বঙ্গভবন থেকে এবং কর্নেল জামিল গণভবন থেকে আসতে ছিলেন। যদি আমরা খুব ভোরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পৌঁছাতে পারতাম তাহলেও আমরা বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারতাম না কারণ, আমরা অস্ত্রহীন ছিলাম। উল্লেখ্য যে, ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নামে কোনো অস্ত্র বরাদ্দ থাকে না। ৩২ নম্বর বাড়িতে আক্রমণের সংবাদ শোনামাত্র কর্তব্যে সাড়া দেওয়াই ছিল তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা হোক, একটা ব্যাপার নিশ্চিত ছিল যে বঙ্গবন্ধু, যদি আমাদের পরামর্শ মোতাবেক প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বঙ্গভবন বা গণভবনে থাকতেন, তাহলে সামরিক অভ্যুত্থান কৃতকার্য হওয়া কষ্টসাধ্য হতো। ৩২ নম্বর বাড়ির প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যথেষ্ট ঢিলেঢালা ছিল। বছরের পর বছর (১৯৭২-১৯৭৫) এদিকে নজর না দেওয়া অবশ্যই আমাদের ব্যর্থতা ছিল। সুতরাং এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের চিফ সিকিউরিটি অফিসার এবং ব্যক্তিগত স্টাফদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা; প্রহরী নিয়োগ, গোয়েন্দা কার্যক্রম ইত্যাদি ব্যাপারে অদূরদর্শিতার জন্য তাদের দায়ী করা যায়। যদিও তখন প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার পরও আমার যতদূর মনে পড়ে তাদের ৩২ নম্বর রোডে নিয়োজিত করা হয়নি। বাড়িটি তখনো সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত ২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির প্রহরাধীন ছিল। বিচিত্র! অবাক হওয়ার মতো একটি বিষয়। আর আমরা কিছুই অাঁচ করতে পারলাম না। 21shomoy

    যেহেতু সেনাবাহিনী এই সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত ছিল না সেহেতু পুরো সেনাবাহিনী ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েছিল। বরং সেনাবাহিনীকে কোনোভাবেই এই সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী করা যাবে না। কিন্তু সেনাবাহিনীর সিনিয়র কমান্ড কর্তৃক ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটার পর ঘটনাস্থলে যাওয়া সবাই আকাঙ্ক্ষিত ছিল। ঘটনার পর, স্থানীয় সেনা অধিনায়ক ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং সেনাবাহিনী পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছিল। যে কোনো বিবেচনায়ই এটা ছিল একটি চরম ব্যর্থতা। যা হোক, নেহাত কর্তৃত্বের তাগিদেই আমরা তিনজন সেদিন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে ছুটে গিয়েছিলাম। নানা রকমের বিশেষণ যেমন- অতি সাহসিকতা, দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ উদাহরণ সৃষ্টি, সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ বা চরম উৎসর্গ ইত্যাদির সংশ্লিষ্টতা তখন ছিল না এবং আমাদের খ্যাতি হিসেবে এখনো এগুলোকে গণ্য করা যাবে না।

    আমি তখন ২৫ বছরের সীমিত জ্ঞানের একজন জুনিয়র অফিসার ছিলাম। সুতরাং এখন ৪০ বছর পর আপনাদের অনেকের প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে সক্ষম হব না। সুত্রঃ

    বাংলাদেশ প্রতিদিনঢাকা, শনিবার, ১৫ আগস্ট ২০১৫

    Like

Leave a comment